গল্প
কোজির ভয়
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
রিঙ্কুরা বসেছিল ওদের বাড়িতে ঢুকেই যে ঘরটা, সেটায়। রিঙ্কুরা মানে রিঙ্কু, ওর বাবা-মা আর ওদের বাড়ির পোষা কুকুর কোজি।
মেঝেতে মাদুর পেতে বসে আছে ওরা। আজ ছুটির দিন। বিকেল গড়িয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এখন সন্ধ্যে হবে হবে করছে। রিঙ্কুর বাবা-মা নানান কথা বলছেন। রিঙ্কুও বলছে মাঝেমধ্যে একটা দুটো কথা। আর, ওদের ঠিক মাঝখানটায় টানটান হয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে কোজি। রিঙ্কু কোজির মাথায়, সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎই কাছে-পিঠে কোথায় যেন একটা শব্দবাজি ফাটল ভীষণ জোড়ে। আর তাতেই চমকে উঠল ওরা চারজনই। কোজি তো ভয় পেয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্যের মতোন ছুটে বেড়িয়ে গেল সে ঘর থেকেই।
"এই শুরু হোলো উৎপাত। দ্যাখ্ দ্যাখ্ রিঙ্কু, কোন্ ঘরে গেল কোজি?" বললেন রিঙ্কুর বাবা।
আজ কালীপুজো। আর, কালীপুজোর রাত মানেই তো শব্দবাজির দৌরাত্ম্য। দুর্ভাগ্যক্রমে, এ যেন এক রীতি হয়ে গেছে।
"কোজি...কোজি..." তার প্রিয় পোষ্যকে ডাকতে ডাকতে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে ঢোকে রিঙ্কু। কোজিকে ওদের বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকে কোজি যে বাজির শব্দ ভীষণই ভয় পায়, তা প্রতি কালীপুজোর সন্ধ্যেতে, রাতে, দেখে আসছে রিঙ্কু। বাজির শব্দ শুনেই লুকিয়ে পড়ে কোজি বাড়ির এখানে ওখানে। কখনো সিঁড়ির তলার ঘুপচি মতোন জায়গাটায়, কখনো খাটের তলায়, আবার কখনো বা সোফার নিচটায়।
বাবা-মা'র কাছে শুনেছে রিঙ্কু, পশু-পাখিরা বাজির শব্দ সহ্য করতে পারে না। ভয় পায় খুব। একথা জানার পর থেকে কখনও শব্দবাজি ফাটায় নি রিঙ্কু। ও যে পশু-পাখিদের বড় ভালোবাসে।
আজ কোজিকে পেল রিঙ্কু ওদের শোওয়ার ঘরের পালঙ্কটার নিচে। অন্ধকার ভিতরটায় চুপ করে বসে ছিল কোজি। রিঙ্কু আস্তে আস্তে বের করল ওকে। বের করার সময়ই টের পেল থরথর করে কাঁপছে সারা শরীরটা কোজির।
বাজির শব্দে কি ভয় পেয়েছে কোজিটা! মনে মনে নিজেকে বলে রিঙ্কু। গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে কোজিকে একটু ধাতস্থ করলো রিঙ্কু। তারপর, কোলে তুলে নিল ওকে। বলল, " ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি তো আছি তোর সাথে। একদম ভয় পাবি না।"
কোজি কি বুঝল কে জানে? সে তার ছোট্ট লাল জিভটা বের করে চেটে দিল রিঙ্কুর হাতটা।
রিঙ্কুর মনে হোলো, কোজি ওকে ঐভাবে "থ্যাংক ইউ" বলল।
Comments :0