আবাস যোজনার তালিকায় আবারো সেই বিত্তবান পাকার ঘরের মালিকদেরই নাম। মাটির ভাঙা বাড়ি বা ছিটে বেড়ার বাড়িতে বাস করেন এমন গরিব পরিবার গুলির নাম সেই তালিকায় না থাকায় তাঁদের ঘরে সার্ভে টীমও যাচ্ছেন না। সব চেয়ে তাজ্জব ঘটনা তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানের পাকাবাড়ি, কেউ হাইস্কুলের শিক্ষক, গ্রামে আবাস যোজনায় বঞ্চিত মানুষের জনরোষ সামাল দিতে কেউ কেউ বিডিও দপ্তরে গিয়ে তাদের নাম বাদ দিতে লিখিত ভাবে মুচলেখা দিচ্ছেন। সেই ঘটনা ঘটছে জেলা জুড়ে।
জেলার রামজীবনপুর পৌরসভায় ৩৬০০ জনের মতো আবাস তালিকায় নাম। তার মধ্যে ৬০০ জন গরিব মানুষের কারও নাম নেই। কারোর একাধিক পাকা বাড়ি এমন দের নাম রয়েছে ৫০ হাজার টাকা কাটমানি দিয়ে।
এই পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভু দাস, পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক, শম্ভু দাসের রয়েছে একটি বিশাল দ্বিতল পাকার বাড়ি, তবুও শম্ভু দাসের স্ত্রী মনীষা দাস পেয়েছে হাউস ফর অল এর বাড়ি। ইতিমধ্যে সে বাড়ির কাজও শুরু হয়েছে। আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে শোরগোল। নিজের সেই দ্বিতল বাড়ির গায়েই এই বরাদ্দ টাকায় ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। সেই নির্মাণ আড়াল করতে চারিদিকে টিন আর পলিথিন দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে।
আরোও তাজ্জব ঘটনা, এই পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি উত্তম রায়ের চারটি পাকা বাড়ি। তার মধ্যে বাঁধাঘাট মৌজায় হাউস ফর অল বরাদ্দ টাকায় বাড়ি নির্মাণ করে সেই বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন এক ব্যবসায়ীকে। তার পরিবার এই ভাবে ২টি হাউস ফর অল বরাদ্দ পেলেও এবারেও পরিবারের নামে আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে।
পৌরবাসীদের অভিযোগ, তাঁরা বারে বারে পৌরসভায় জানিয়েও মেলেনি সরকারি বাড়ি। ভাঙ্গাচোরা মাটির বাড়িতে- কেউবা ত্রিপল টাঙিয়ে করছে বসবাস। রানীরুই দাস তার ত্রিপল টাঙ্গানো ভাঙা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, এলাকার নেতাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে না পারায় মেলেনি বাড়ি। এমনকি তাকে টাকার বিনিময়ে এক টুকরো খাস জমি দিলেও পরে উচ্ছেদ করে দেয়। আকাশ ভুক্তা নামে এক পৌরবাসী বলেই দিলেন, হাউস ফর অল এর বাড়ির পেয়েছে যাদের রয়েছে একাধিক বড় বড় পাকার বাড়ি এবং ৫০ হাজার টাকা কাটমানি অগ্রিম দিতে পেরেছে। তারা টাকা দিতে অক্ষম তাই তারা বঞ্চিত। উত্তম দাস নামে একজন রিকসাচালক বলেন, আমার বাড়িতে স্থানীয় নেতারা এসে মাংস ভাত খেলো, মদ খেলো, তারপরও বললো ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিলে আবাস ঘর পাবে। টাকা দিতে পারিনি। ভাঙা ঘর কোনো মতে ত্রিপল দিয়ে বাগিয়ে আছি। বৃষ্টি হলে রাত জাগি ঘরের কোনায় বসে।
প্রশ্ন উঠছে পৌর এলাকায় এখনো বহু, গৃহহীন মানুষ রয়েছেন যারা ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতেই বসবাস করছেন,তাদের এখনো বাড়ি মেলেনি, আর তৃণমূল কাউন্সিলর, নেতাদের একাধিক পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কিভাবে মিলল বাড়ি।
আরেও তাজ্জব ঘটনা জেলা জুড়ে। ২০২১ সালে তারা নাকি গরিব ভাঙা বাড়িতে থাকতেন, তাই তাদের নাম আবাস যোজনায় স্থান পায়। ২০২২ সালে তৃণমূলের প্রধান হওয়ার পর এখন তাদের সবার পাকা বাড়ি হয়েছে। এমন তৃণমূল প্রধানরা এখন তাদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন নিয়ে বিডিও র শরণাপন্ন বলে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য। মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরি গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান যুমনা বাস্কে আর তার শ্বশুর মুন্সিপাটনা বুথের সভাপতি। তাঁদের পরিবারের দুটি নাম আবাস যোজনার তালিকায়। এখন প্রধান তাঁর নাম বাদ দিতে বিডিও দপ্তরে আবেদন জমা দেয়। এমনি ঘটনা ডেবরা ব্লকের ১নং ডেবরা গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান পূর্ণিমা ভূঁইয়া তার নাম আবাস যোজনা থেকে বাদ দিতে বিডিও দপ্তরে আবেদন জমা দেয়। এই ব্লকের রাধামোহনপুর ১ নং গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান তনুশ্রী মন্ডল তার নাম বাদ দিতে আবেদন পত্র জমা দেয়। এদের সবারই পাকা বাড়ি। তা নাকি প্রধান হওয়ার পর তৈরী হয়েছে। এই প্রচার তৃণমূলের জেলা নেতাদের।
Comments :0