STORY \ MUKTA BIHANGARA — PALLAVI ADAK \ MUKTADHARA | 28 OCTOBER 2024

গল্প \ মুক্ত বিহাঙ্গনা — পল্লবী আদক \ মুক্তধারা \ ২৮ অক্টোবর ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

STORY  MUKTA BIHANGARA  PALLAVI ADAK  MUKTADHARA  28 OCTOBER 2024

গল্প

মুক্ত বিহাঙ্গনা

পল্লবী আদক

মুক্তধারা


বহু বছর পর আজ মালতী দেবী স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে।উনি জানেন না,ওনার গন্তব্য এখন কোথায়,উনি জানেন না এরপর উনি কি খাবেন,কি পড়বেন,উনি শুধু এতটুকু জানেন,এখন উনি মুক্ত। 
মালতী দেবীর একটাই ছেলে।ছোটবেলা থেকে সেই ছেলের আদরের কোনো অভাব হয়নি। ছেলের বাবা অর্থাৎ মালতী দেবীর স্বামী সরকারি চাকরি করায়, ওদের পরিবারটাও আর্থিকভাবে বেশ স্বচ্ছল ছিল।ফলে,যখন যা চাইতো ছেলে,তখনই তার সামনে হাজির হয়ে যেতো।মা বাবা দুজনেই ছেলেকে খুব ভালোবাসত।
সময়ের সাথে সাথে সব কিছু পরিবর্তনশীল।
মালতী দেবীর স্বামী মারা যাওয়ার পর, ওনার বরাদ্দকৃত পেনশনের অর্ধেক মালতিদেবীর হাতে আসে।ছেলেও একটা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পায়। যথাসময়ে ছেলের বিয়েও হয়।আর তারপরেই সব কিছুর পরিবর্তন হয়ে যায় ।
শাশুড়ি হিসেবে মালতী দেবী নিজের সব দায়িত্ব,কর্তব্য পালন করেছে।ছেলের নতুন বিয়ের পর বৌমার যত্ন করা,ঠিকঠাক কথা বলা,কোনো কিছুরই কার্পণ্য করেননি।কিন্তু,বৌমা যেনো শাশুড়িকে ঠিক ভালো চোখে দেখতে পারে না।এটা অবশ্য প্রথম থেকেই শাশুড়ি লক্ষ করেছিল। কিন্তু কিছু বলতে পারেনি।
যত দিন যাচ্ছে আস্তে আস্তে এই পরিবর্তন আরও প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করলো।বৌমা নিজে তো ওনার সাথে ভালো করে কথা বলে না,উল্টে  চেকেও তার মায়ের সাথে বেশি কথা বলতে দিতোনা।এমনকি,মালতী দেবীর ছেলেকে পযন্ত বৌমা নিজের হাতে রাখতো।আর সে ছেলেও তেমনি,বউ যা বলে,তাই সে মুখ বুজে মেনে নেয়।
মাসের শেষে মালতী দেবীর পেনশনের অর্ধেক টাকা টা কেড়ে নিয়ে ,নিজের মতো করে রান্না করে থাকতে বলে সে বৌমা।শুধু এটাই নয়,মালতী দেবীর গায়ে হাত পযন্ত তুলতে দ্বীধা করেনা সেই কালনাগিনী রুপি বৌমা।
মালতী দেবী নিজের ঘরে বসে চোখের জল ফেলে আর মনে মনে ভাবে ' ছেলেবেলা থেকে এত আদর যত্নে মানুষ করা ছেলে কেনো  তার বউয়ের মুখের উপর কিছু বলতে পারছে না '!!'মা কে যে আমি বড্ড ভালোবাসি,মায়ের ওপর অত্যাচার করলে এই বাড়িতে তুমি আর থাকতে পারবেনা বলে  দিলাম '!!!! এই কথা অন্তত বউয়ের মুখের উপর বলতে পারত,তাহলে একটু হলেও বউ ভয় পেতো,কিন্তু এই সামান্য কথাটা পযন্ত বউ কে ছেলে বলতে পারবে না।ছেলে নিজেই যে বৌয়ের কথায় উঠছে বসছে।সেখানে ছেলে কি,বউকে শাসন করবে!!!
পাড়ার বাকি মানুষেরাও বুঝতে পারছে আসতে আসতে এই বউয়ের রূপ।অনেকে তো জিজ্ঞেসও করে মালতী দেবীকে " হ্যাঁ গো দিদি,তুমি দেখি আলাদা রান্না করে খাও,আগে তো কত ভালো ভালো রান্না করতে ,এখন শুধু ডাল ভাত খাও, সেটাও একা একা।বলি,তোমার বৌমা কি তোমাকে রান্না করে দেয় না নাকি!!!"
যতই হোক নিজের ছেলের বউ তো,তাই সে যত অত্যাচার ই করুক না কেনো ,তার নামে নিন্দে মন্দ করতে মালতী দেবী পারবেন না।তাহলে ছেলের চুপ থাকা নিয়েও হাজার কথা উঠবে।ছেলের সাহসিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠবে।সবাই ছেলেকে দেখে বলবে স্ত্রৈণ একটা।না,না,মালতী দেবী সেটা চান না।নিজের ছেলের বদনাম চান না।তাই কষ্ট টাকে গিলে,তিনি প্রতিবেশী দের বললেন " আসলে বয়স হয়েছে তো,তাই এই হালকা খাবার ই এখন উপযুক্ত।বৌমা তো বলেছিল নিজে রান্না করে দেবে এমন ই হালকা খাবার,কিন্তু বৌমা সব কাজ করবে,আর আমি শুধু খাবো ,এটা তো হয় না,তাই আমার নিজের রান্না টা নিজেই করে নি"।
ওনারও ইচ্ছে হয় ভালোমন্দ খেতে,ঠিক আগে যেমন মা ছেলে একসাথে বসে ভালোমন্দ খেতো। গেলো মাসে উনি পেনশনের টাকা টা দিতে চাননি বলে বৌমা ওনার চুলে পযন্ত হাত দিয়েছেন,ওনার ছেলে সবটাই দেখেছে।কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করেনি।এমনকি বৌমা এই বলেও শাসিয়েছে " এই ব্যাপারগুলো যদি বাইরে বেরোয় তাহলে আরও খারাপ হবে ওনার সাথে"।
সারাদিন উনি ভয়ে ভয়ে থাকেন। নিজের ছেলের বিয়ে করা বউয়ের ভয় এ।
না না,এটা আর চলতে পারে না।ছেলের কথা ভেবে বৌমার মুখের উপর হয়তো কিছু বলতে পারবেন না।কিন্তু নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সুযোগ বুঝে বাড়ি উনি ছাড়লেন।রাতের অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে অজানা গন্তব্যে পারি দিলেন। যেখানে আর যাই হোক,এইরকম বৌমার ভয়ে সারাদিন অন্তত গুটিয়ে থাকতে হবে না।যেখানে মনের আনন্দে হাসতে পারবেন।
মাথার উপর দিয়ে এক ঝাঁক পাখি ,দল বেঁধে,ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে। মালতী দেবী ভাবছেন আজ উনিও একজন পাখি।যে নিজের স্বাধীন মতো ডানা মেলে যেখানে ইচ্ছা চলে যাবে।কেউ তাকে আটকাতে পারবেনা।কেউ না।
 

Comments :0

Login to leave a comment