প্রবন্ধ
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় এম.ডি.
তপন কুমার বৈরাগ্য
মুক্তধারা
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় এম.ডি.ছিলেন ভোলানাথ
বসু।ভোলানাথ বসু১৮২৫খ্রিস্টাব্দে ব্যারাকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি চেয়েছিলেন ভোলানাথ বসুকে প্রথম ভারতীয় এম.ডি.করবেন।১৮৪৫খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁকে ইংল্যান্ডে
নিয়ে আসেন। ভোলানাথ বসুর বাবা ছিলেন রামসুন্দর বসু।
তখন লর্ড অকল্যান্ড ব্যারাকপুরে অকল্যান্ড বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই বিদ্যালয়ে ভোলানাথের প্রথম শিক্ষালাভ।
সাংসারিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না।তাই ডাক্তার
হবার স্বপ্ন তিনি কোনো দিন দেখেন নি। কিন্তু মেধাবী ছাত্র
হিসাবে তিনি লর্ড অকল্যান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
তিনি মেডিকেল কলেজে প্রথমে তাঁকে ভর্তি করে দেন।সেখান থেকে পাশ করার পর প্রিন্স দ্বারকানাথ তাঁর সব দায়িত্ব নিয়ে
লন্ডনে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।প্রিন্স দ্বারকানাথ রাজকীয়
জীবন যাপন করলেও মানুষের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদতো।
ভোলানাথ বসু তখন লন্ডনে এম.ডি পড়ছেন। দিনটা ছিলো
১লা আগস্ট ১৮৪৬। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস
ত্যাগ করেছেন। মাত্র ৫২বছর বয়েসে।লন্ডনের বাড়িতে ছুটে গেলেন ভোলানাথ বসু। চোখের জলে তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন। এরপর সেখানে আরো দু'বছর অতিবাহিত করার পর ১৮৪৮খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এম,ডি হিসাবে ভারতে ফিরে আসেন। লর্ড অকল্যান্ড তাঁর
এই সাফল্যর জন্য তাঁর বহুমূল্যের হাতের সোনার ঘড়িটা
ভোলানাথের হাতে পরিয়ে দেন।প্রিন্স দ্বারকানাথ এবং
লর্ড অকল্যান্ডকে ভোলানাথ বসু কোনোদিন ভুলতে পারেন নি।
তিনি ৫৭বছর বেঁচে ছিলেন।১৮৮২খ্রিস্টাব্দের ২২শে সেপ্টেম্বর
তিনি মারা যান।ভোলানাথ বসু খুব উদার প্রকৃতির মানুষ
ছিলেন।তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর সব বৈজ্ঞানিক
যন্ত্রপাতি কলিকাতা মেডিকেল কলেজে দান করা হয়।
ব্যারাকপুর মহকুমা এলাকার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সরকারী
হাসপাতাল বি এন বোস হাসপাতাল তাঁর অনুদানেই গড়ে উঠেছে।
তাঁর নাম অনুসারেই এই হাসপাতালের নামকরণ করা হয়।
ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে ভোলানাথ বসু এক
স্মরণীয় ও বরণীয় নাম।
Comments :0