উৎপল মজুমদার: মালদহ
নারী নির্যাতন আর দুর্নীতির প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা আগেই ছিল। মালদহের এসপি’র দপ্তরের দিকে রওনা হয়েচিল মিছিল। তবু ছাত্র-যুব-মহিলা মিছিলের রাস্তা আটকালো পুলিশ। প্রতিবাদে শুরু হলো গৌড় রোধ অবরোধ। যার জেরে তিন সংগঠনের নেতৃত্বকে আলোচনায় ডাকতে বাধ্য হলেন এসপি।
এদিন মালদহে ছিলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে, সভাপতি প্রণয় কার্য্যী এবং তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রাস্তা অবরোধ ঘিরে উত্তেজনাও ছড়ায়। ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জী মন্তব্য করেন, ‘‘ আগাম জানিয়ে এসেছি। গল্প করতে আসিনি। জেলার একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও মানুষের আরো অনেক সমস্যা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা তুলে ধরে প্রতিকার চাইতে এসেছিলাম। কিন্তু দেখা না করে প্রমাণ করলেন এসপি তৃণমূলের হয়ে কাজ করেন।’’
এরপরই গৌড় রোড মোড়ে পথ অবরোধ করে সভা শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসপি আলোচনার জন্য ডেকে পাঠালেন। মহিলা নেত্রী মোনালিসা সিনহা, রুণু কুণ্ডু, যুবনেতা অরূপ পোদ্দার, ছাত্রনেতা শুভজিৎ সরকার ও চিরঞ্জিত মণ্ডলের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল এসপি-কে স্মারকলিপি দিয়ে দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা করেন। মোনালিসা সিনহা ফিরে এসে সভায় বলেন, এসপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আমরা দেখব। আশ্বাস অনুযায়ী কাজ না হলে ফের নামব আন্দোলনে।
মীনাক্ষী মুখার্জী বলেন, ‘‘রাজ্য দিনে দিনে নারীদের উপর অত্যাচার বেড়ে চলেছে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী যেমন উদাসীন তেমনি পুলিশ আধিকারিকরাও উদাসীন। যে ব্যবসাই মানুষ করুন না কেন, তা টোটো চালানো থেকে শুরু করে যাই করুন, তোলা দিতে হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘বসতবাড়ি বা ব্যবসা, যে যাই করুন না কেন, জঞ্জাল কর দিতে হয়। যার সর্বনিম্ন দর দৈনিক এক টাকা। ব্যবসায়ীদের আরো বেশী। তাহলে মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ টাকা দেন কেন? প্রশ্ন হলো, এই টাকা কার পকেটে যাবে, চেয়ারম্যান না কাউন্সিলদের পকেটে?’’
মালদহ শহরের রথবাড়ি মোড়ে এক সভার পর মিছিল শুরু হয় এসপি অফিসের উদ্দেশ্যে। রবীন্দ্র এভিনিউ, ফোয়ারা মোড়, মধুপুর বিমল দাস মূর্তি মোড়, গৌড় রোড মোড় হয়ে এগোয় মিছিল। রথবাড়ি থেকে মিছিল শুরুর আগে সভা হয় মহিলা সমিতির জেলা সভানেত্রী শেফালী খাতুনের সভাপতিত্বে। এখানে ভাষণ দেন রুণু কুণ্ডু, অরূপ পোদ্দার মোনালিসা সিনহা, চিরঞ্জিত মণ্ডল ও অনরণ খান।
গৌড় রোড মোড়ে আরেকটি পথ সভা হয় কৌশিক মৈত্রর সভাপতিত্বে্। সভায় বক্তব্য রাখেন কনীনিকা ঘোষ, মীনাক্ষী মুখার্জী, প্রণয় কার্য্যী ও দেবাঞ্জন দে।
কনীনিকা ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য এখন ‘থ্রেট কালচার’ চলছে। মানুষ কোন প্রতিবাদে সোচ্চার হলেই এই কালচারের শিকার হচ্ছেন। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। আরজি কর নিয়ে যেভাবে মানুষ পথে নেমেছেন তা থেকেই এটা পরিষ্কার।’’
দেবাঞ্জন দে বলেন, ‘‘রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন আটকে রেখেছে সরকার। তৃণমুল ছাত্র নেতারা অবৈধভাবে ছাত্র সংসদ চালাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের করতে হবে। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির নির্বাচন না করে অবৈধভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করেও টাকা লুট করা হচ্ছে। এসএফআই এসব মেনে নেবে না।’’
Comments :0