গল্প
ত্রিনয়নী
সৌরভ দত্ত
মুক্তধারা
( গত সংখ্যার পর )
সপ্তমীর সকাল থেকে মাইকে অ্যানাউন্সমেন্ট হচ্ছে বিনামূল্যে যেমন খুশি আঁকো প্রতিযোগিতা।সকলে নাম নথিভুক্ত করুন। একদিকে নবপত্রিকা স্নান চলছে। অন্যদিকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।দুজন বিচারক ঘুরপাক খাচ্ছেন। মণ্ডপের গেটে টহলরত সিভিক।চন্দনের বোন ক্লাস ফাইভের শ্রেয়শ্রী অঙ্কন প্রতিযোগিতার কথা শুনে বন্ধুদের সাথে এসেছে পূজা মণ্ডপে।আর্ট পেপারে এঁকে ফেলেছে অনেকগুলো কোকনদ জলে ভাসছে তাতে ফুটে উঠেছে অসংখ্য ক্ষতবিক্ষত নারী চোখ। উপপ্রধানের মেয়ে অনামিকা এঁকেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। সায়ন্তনী এঁকেছে দুয়ারে সরকার।মণীষা এঁকেছে –আর.জি কর একটা লাশঘর–উই ডিম্যান্ড জাস্টিস।ঋষিতা ড্রাই প্যাস্টেলে আঁকল বাংলা মহিষাসুর বিদায় হোক।ক্লাস ফোরের পার্থ নিজের অজান্তেই এঁকে ফেলেছে প্যান্ডোরার বাক্স–এ সময়ের খণ্ড চিত্র তাতে আছে।কত ছবি কত নতুন নতুন ভাবনা। প্রতিযোগিতা শেষ বিচারের পালা দুজন বিচারক এর মত দুরকম হয়ে গেছে। বুথ সভাপতি কেষ্টদা পাঞ্জাবি খিলিয়ে বিচারক হয়েছেন। কমিটির সবাই ছবিগুলো দেখতে থাকল।মূল উপদেষ্টা বলল– এসব ছেলেমেয়েদের আঁকা ডিসকলিফাই করতে হবে।কেষ্টদার জাজমেন্টটাই ঠিকঠাক বুঝলেন।অম্বরিশবাবুকে বলা হল–আপনি ছবির কিস্যু বোঝেন না মশাই।কি সব ফার্স্ট সেকেন্ড করেছেন!সি.পি এম করেন নাকি!এসব প্রতিবাদ প্রতিবাদ এখানে চলবে না। শেষমেষ কমিটি বলল–লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রথম। দুয়ারে সরকার দ্বিতীয়।বাকিরা সব ছবি বাদ।অম্বরিশবাবু আপনি আর আমাদের এখানে কোনদিন জাজমেন্ট করতে আসবেন।না যোগ্যতা নেই।সবার সামনে অসম্মানে, লজ্জায় চোখ মুছলেন বছর সত্তরের অম্বরিশবাবু। মনে মনে ভাবছেন– আমার এতদিনের শিল্পচর্চায় তাহলে কি কোথাও কি কোন ফাঁক থেকে গেছে।পিকাসোর গুয়ের্নিকাও কি তাহলে কোনো ভ্রান্ত দর্শন!বিরস বদনে রওনা দিল বাড়ির দিকে রওনা দিতে থাকে।মাইকে –ঝিঙ্কাচিকা–ঝিঙ্কাচিকা বাজছে।
চন্দন মণ্ডপের কোনে দাঁড়িয়ে দেখছিল উদ্যোক্তাদের এইসব কীর্তিকলাপ।পুরুত মশাই মন্ত্রপাঠ করছেন।দুর্গার মাঝের চোখটা কিরকম বড়ো হচ্ছে ।ক্রমশ গনগনে লাল হয়ে উঠছে।চকচক করছে হাতের ত্রিশূল। ছিন্নভিন্ন করে দিতে চাইছে নরপশুদের নাভি। চন্দন বাড়ি ফিরে দরজা বন্ধ করে আনাফ্রাঙ্কের ডায়েরির সেই কালো দিনগুলোর পাতা ওল্টাতে থাকে।
এদিকে মণ্ডপে বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির উপস্থিতিতে সফল প্রতিযোগিদের স্মারক ও সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। মণ্ডপ থেকে খুদের দল আঁকার সরঞ্জাম বদলে নিয়ে ফিরে আসছে নীরব বদনে।ক্রোধে-অভিমানে কর্তৃপক্ষের টিফিন ওরা প্রত্যাখ্যান করেছে।একজন যেন আগামীর এক-একটা দুর্গা। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ভাবছে–এই মহিষাসুর কি বধ হবে না?বধ হবে না কি মহিষাসুর!
সমাপ্ত
Comments :0