প্রবন্ধ
ঘূর্ণিঝড়ের সাতকাহন: আকস্মিক ‘দানা’র আবির্ভাব
সৌরভ দত্ত
মুক্তধারা
ঘূর্ণবাত কথাটির সঙ্গে কমবেশি সকলেই সুপরিচিত।ঘূর্ণবাত বলতে সাধারণত একপ্রকার কেন্দ্রমুখী চক্রাকার বায়ুপ্রবাহকে বোঝায়। সাইক্লোন হন হল একটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত। বিশেষত মে-জুন ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বছরে দুবার সাইক্লোনের আবির্ভাব ঘটে।এই ঝড়ের প্রভাবে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার সহ ভারতীয় উপমহাদেশে সাংঘাতিক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আরব সাগর ও ভারত মহাসাগর এর চাইতে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই সাইক্লোনের সংখ্যার আধিক্য দেখা যায়। পৃথিবীর জলবায়ুতে লা-নিনার প্রভাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাইক্লোন সৃষ্টির অন্যতম কারণ।লা-লিনা সবসময় ঘূর্ণবাতকে ত্বরাণ্বিত করে। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতের পূর্ব উপকূলে বিশেষত বাংলাদেশ তীরবর্তী অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাবে সবকিছু তছনছ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়। সাধারণত মৌসুমী বায়ু আসার আগে ও বিদায় নেবার সময় বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় তুমূল ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপ তৈরি হয়। গভীর নিম্নচাপ যখন শক্তিশালী হয় তখন তা অনুকূল পরিবেশে ঘূর্ণিচাপে পরিবর্তিত হয়।মূলত লোয়ার লেভেল কনজারভেন্স ও আপার লেভেল ডাইভারজেন্স বেশি হওয়ার সাথে ম্যাডেন ডুলিয়া ওলিয়েশনের সাপোর্টে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।দুই বিপরীত দিকে থাকা উচ্চচাপের অবস্থানগত কারণে হঠাৎই সমুদ্রের উপরিতল থেকে রিকার্ভ করে ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সমূহ ক্ষতিসাধন করে। বিশেষত পোস্ট মুনসুনে মৌসুমী বায়ু প্রত্যাগমনের পূর্বে নীচের অংশে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরে বায়ু চলাচল কম থাকায় নিম্নচাপ শক্তিশালী হয়। ঘূর্ণিঝড়কে নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তবেই ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে মানুষজনকে বাঁচানো যায়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর চারিত্রিক পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য দায়ী।
ঘূর্ণিঝড় আসার আগে কয়েকটি আগাম সতর্কতা জরুরি:--
১.ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় খাবার দাবার হাতের কাছে মজুত রাখতে হবে।
২.সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা।
৩.ঘূর্ণিঝড় ল্যাণ্ডফল করার পূর্বে যতটা সম্ভব ফসল কেটে নেওয়া।
৪.মৎসজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার আগাম সতর্কতা।
৬.ঘূর্ণিঝড়ের সময় যতটা সম্ভব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে না বেরনো।
৬.সর্বপরি প্রশাসনিক স্তরে তৎপরতা ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ।
প্রায় পঁচিশ বছর আগে অক্টোবরে সুপার সাইক্লোনের তাণ্ডবে গোরু পর্যন্ত গাছে উঠেছিল ।মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল প্রায় ৪০-৫০ হাজার।এর পরবর্তীকালে মানব সভ্যতার বুকে আছড়ে পড়েছে বিভিন্ন বিধ্বংসী সাইক্লোন।অতীতে আয়লা,আমান, হুদহুদ,ফোণি,রেমাল প্রভৃতি অভিনব নামাঙ্কিত ঘূর্ণিঝড় গুলিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জৈব বৈচিত্র্য।সম্প্রতি কিছুক্ষণের মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে শুরু হয়ে যাবে সাইক্লোন ‘দানা’ এর তাণ্ডব। সময়ের সাথে সাথে বাড়বে দুর্যোগের হার। আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ গবেষকদের মতে কলকাতা,হাওড়া প্রভৃতি এলাকায় আমফানের চেয়ে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে ‘দানা’ নামক ঘূর্ণিঝড়টি।
Comments :0