STORY \ PUJA SANGKHA — SOURISH MISHRA \ NATUNPATA \ 27 OCTOBER 2024

গল্প \ পুজোসংখ্যা — সৌরীশ মিশ্র \ নতুনপাতা \ ২৭ অক্টোবর ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  PUJA SANGKHA  SOURISH MISHRA  NATUNPATA  27 OCTOBER 2024

গল্প

পুজোসংখ্যা

সৌরীশ মিশ্র

নতুনপাতা


"বহ্নি কি ঘুমিয়ে পড়েছে? খাওয়া নিশ্চয়ই হয়ে গেছে ওর?" পা থেকে খোলা শুগুলো প্যাসেজের এক পাশে পা দিয়ে সড়াতে সড়াতে স্ত্রী করবীদেবীকে কথাগুলো বললেন অংশুমানবাবু।
"হ্যাঁ, খাওয়া হয়ে গেছে। কাল থেকে তো স্কুল। তবে, বোধহয় ঘুমোইনি এখনো। এই একটু আগে যখন দোতলায় গিয়েছিলাম, দেখলাম, পুজোসংখ্যা পড়ছিল বিছানায় শুয়ে-শুয়ে।"
"আজ বড্ড দেরী হয়ে গেল। ভাবলাম, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব। তার যো আছে? কতগলো ট্রেন ক্যানসেল!" গজগজ করতে করতে কাঁধের অফিস-ব্যাগটা সেন্টার-টেবিলে নামিয়ে রেখে বাথরুমে ঢুকলেন অংশুমানবাবু।

অফিস থেকে ফিরলেন অংশুমানবাবু। কলকাতায় একটা বেসরকারি অফিসে মাঝারি পদে চাকরি করেন তিনি। স্ত্রী আর এগারো বছরের মেয়ে বহ্নিশিখাকে নিয়ে তাঁর সংসার। থাকেন কলকাতা থেকে কিছুটা দূরে এই মফস্বলে। ট্রেনেই ডেইলি প্যাসেঞ্জারি ক'রে অফিস করেন। এমনিতে আটটার মধ্যেই ফিরে আসেন বাড়িতে। কিন্তু আজ সাড়ে দশটা বেজে গিয়েছে।

হাত-পা ধুয়ে চোখে-মুখে জল দিয়ে দ্রুত পোষাক পাল্টে বেরোলেন বাথরুম থেকে অংশুমানবাবু যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি। তারপর অফিসের ব্যাগটা টেবিল থেকে তুলে চললেন দোতলায়। এই বাড়ির দুটো বেডরুমই দোতলাতে।

সিঁড়ি দিয়ে দোতলাতে উঠেই ডানদিকে প্রথম ঘরটাই বহ্নিশিখার শোওয়ার ঘর। অংশুমানবাবু দেখলেন, ঘরে আলো জ্বলছে। ঘরে ঢুকলেন তিনি। আর, ঘরে পা দিয়েই দেখতে পেলেন, মেয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে বিছানায়। বুকের মাঝে দু'হাতে ধরা একটা পূজাবার্ষিকী। বুঝতে পারেন অংশুমানবাবু, মেয়ে বইটা পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

অফিস-ব্যাগটা একটা চেয়ারে রেখে প্রায় পা টিপে-টিপে বিছানার কাছে গেলেন তিনি। বহ্নিশিখার ঘুম খুব পাতলা। একটু শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর। তাঁর পায়ের শব্দে যাতে মেয়ের ঘুম ভেঙ্গে না যায়, তাই এই সাবধানতা অবলম্বন।

পূজাবার্ষিকীটা আস্তে আস্তে মেয়ের দু'হাতের মধ্যে থেকে বের করলেন অংশুমানবাবু। এক্ষেত্রেও অত্যন্ত সাবধানে কাজটা করলেন। বইটা বের করে চোখ বোলালেন তিনি খোলা পাতা দুটোয়। দেখলেন, একটা অ্যাডভেঞ্চারের গল্প পড়ছিল মেয়ে। বইটা রাখলেন তিনি বিছানার পাশের ছোটো টেবিলটায়। এবার, চেয়ার থেকে অংশুমানবাবু তুলে নিলেন তাঁর ব্যাগটা। চেন খুলে সেটা থেকে বের ক'রে আনলেন একটা নতুন পুজোসংখ্যা। তারপর, সেটা রাখলেন তিনি মেয়ের ঠিক পাশটায় বিছানার উপর।

আসলে, এই পুজোসংখ্যাটা বেড়িয়েছে গত মাসেই। মেয়ে আবদারও করেছিল এই পুজোসংখ্যাটার জন্য অংশুমানবাবুর কাছে তখন। কিন্তু, এই পুজোসংখ্যাটা বেরোনোর কদিন আগেই এখন যে পুজোসংখ্যাটা বহ্নিশিখা পড়ছিল ঘুমোনোর আগে সেটা কিনে দিয়েছিলেন অংশুমানবাবু। তার উপর এই পুজোসংখ্যাটা বেরিয়েছিল একেবারে মাসের শেষের দিকে। মাসের শেষে আরো একটা পুজোসংখ্যা কিনে দেওয়ার মতোন আর্থিক অবস্থা একেবারেই ছিল না অংশুমানবাবুর। তাই, মেয়ে যখন চেয়েছিল একটু রূঢ় ব্যবহারই করে ফেলেছিলেন তিনি তখন মেয়ের সাথে। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই, সেইদিনের অংশুমানবাবুর ঐ ব্যবহারে যতটা কষ্ট পেয়েছিল বহ্নিশিখা, তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন অংশুমানবাবু নিজে মেয়ের সাথে ঐ রকম ব্যবহার করে ফেলায়। তাই আজ মাইনে পেতেই সোজা চলে গিয়েছিলেন কলেজ স্ট্রিটে বইটা কিনতে।

অংশুমানবাবু পূজাবার্ষিকীটা মেয়ের পাশটায় রেখে তাকালেন মেয়ের দিকে। মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত বোলালেন তিনি একবার। তারপর, মেয়ের দিকে চেয়ে মনে মনে বললেন, এই পুজোসংখ্যাটা চেয়েছিলিস বলে তোকে বকে ছিলাম, মা। আমায় ক্ষমা করিস তুই।
দু'চোখে জল চলে আসে সাথে সাথেই অংশুমানবাবুর। কোনোমতে নিজেকে সামলে অফিস-ব্যাগটা চেয়ার থেকে তুলে নিয়ে ঘরের আলো বন্ধ ক'রে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন অংশুমানবাবু। তাঁর দু'চোখ ততক্ষণে জলে ভরে গিয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment